এ.কে.এম.মাহফুজুর রহমান:
আমার কাছে বৈশাখ আসে না ; আসে ” চৈতপরব “
পরীর ডানায় ভর করে ভাসে শৈশবের “চৈতপরব” !
বয়স তখন আট কি দশ ; অকারণে ছিল মোর গৌরব
নিষ্পাপ হালখাতার চাহিদায় চারদিকে ছড়াতাম সৌরভ
আহা ! শৈশবের সেই জাদুকরি চড়কিদোলা “চৈতপরব” !
সে এক সময় ছিল; আম গাছে ঢিল দিলে জাম পড়ত
আকাশে উড়াতাম ঘুড়ি ; চৈতপরবের সে কি প্রস্তুতি !
মাটির ব্যাংকে সিকি – আধুলি পয়সা জমাতাম
প্রায়ই ব্যাংক ঝাঁকিয়ে পয়সার আওয়াজ শুনতাম।
আহা !পয়সার সেই ঝিনিক – ঝিনিক আওয়াজ গুনতাম !
মাটির ব্যাংকে পয়সা জমাতাম ,
ভুল বললাম ; পয়সা নয় স্বপ্ন জমাতাম ।
কারণ সেই জমানো পয়সায় স্বপ্ন কিনতাম
মাটির তৈরি লাল রঙের বাঁকানো শিং ওয়ালা ষাঁড়
আহা ! কালো হাতীর সঙ্গে থাকতো প্লাস্টিকের গাড়ি !
ভাসমান দোকান নিয়ে স্কুল মাঠে বসতো সেই মেলা
সেই সাথে আড়িয়াল খাঁ নদী তীরেও বসতো মেলা ।
আজও বয়ে চলছে সেই আড়িয়াল খাঁ নদী
প্রজাপতি মনে আজও তা চেপে আছে নিরবধি
আহা ! স্বচ্ছ জলে ঐ নদীর বালু আজও করে চিকমিক !
মামার হাত ধরে মেলায় যেতাম ; ইষ্টিকুটুম পাখি হতাম
আর মামার কাঁধে চড়ে পঙ্খীরাজ হয়ে নদী পার হতাম ।
মামার কাছে হাজার রকমের আবদার করতাম ও পেতাম
তালমেছরি,জিলাপী,কদমা,বাতাসা,টিকটিকির ডিম আর
হাওয়ায় মিঠাই সহ নাম না জানা হরেক রকমের খাবার ।
বাঁশের বাঁশি,খেলনা ইঁদুর,মাটির ময়না,মার্বেল,পুতুল
যা দেখতে পেতাম তাতেই ছিল জাগতিক কৌতূহল
ঐসবই আমার চাই ,
মামার কাছে ছিল মামা বাড়ির আবদার
যা ইচ্ছে করতো তাই চাইতাম ।
তখন খাঁ খাঁ দুপুরে মাটির চুলোয় মিষ্টি আলু পোড়াতাম
উঠোনের পেয়ারা গাছের ডালে বসে সেই আলু খেতাম
বাড়ির সবাই মিলে এক বোল আম ভর্তা সাবাড় করতাম
এঁটেল কাদা মাটি দিয়ে কত – শত খেলনা বানাতাম
আহা ! আমার কাছে বৈশাখ আসে না,আসে “চৈতপরব” !